
বুড়াগৌরাঙ্গ ও তেতুলিয়া নদীর মোহনায় ভেসে ওঠা একটি দ্বীপের নাম চরনজির। চল্লিশের দশকে ভেসে ওঠা এই দ্বীপটি ষাটের দশকে সরকারি বন্দোবস্ত দেওয়া হয়। সময়ের পরিক্রমায় জনসংখ্যা বাড়লেও কোনো সরকারি বা বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। রাঙ্গাবালী উপজেলা সদর থেকে মোটরসাইকেল বা অটোরিকশায় প্রায় সাড়ে তিন কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে গহীনখালী লঞ্চঘাট, সেখান থেকে মাছ ধরার ছোট নৌকায় প্রায় ৪৫ মিনিট সময়ের ব্যবধানে বুড়াগৌরাঙ্গ নদী পাড়ি দিয়ে পৌঁছতে হয় চরনজির দ্বীপে।
সদর ইউনিয়ন থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন থাকায় সব ধরনের নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত এখানকার বাসিন্দারা। মাছ ধরার ছোট নৌকা কিংবা ইঞ্জিনচালিত ট্রলার যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, প্রায় ৬৫০ লোকের বাস এ ছোট্ট দ্বীপে। একদিকে প্রভাবশালীদের জমি দখল, অন্যদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়।
বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ না থাকায় জোয়ারের পানিতে ভেসে যায় রান্নাঘরের হাঁড়ি-পাতিলসহ আসবাব, আবার ভাটির টানে শুকিয়ে যায় গোসলের পানিটুকুও। একসময় নদীর পানি পান করতে হলেও সম্প্রতি কয়েকটি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। এখানে কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান না থাকায় অল্প বয়সেই নদীতে মাছ ধরা ও ক্ষেতে চাষবাসের কাজ করার মতো পেশা বেছে নেয় এখানকার শিশুরা।
দ্বীপের বাসিন্দা মজিবর হাওলাদার বলেন, ‘ভাই রে, আমার চার মেয়ে, এক ছেলে।
মেয়েদের পড়াশোনা করাতে পারিনি। ছেলেটার বয়স পাঁচ বছর হয়েছে। পাশের এলাকা চরবিশ্বাসের একটি হাফিজিয়া মাদরাসায় দিয়ে আসছিলাম। একদিন শীতের রাতে সেখান থেকে পালিয়ে চলে আসছে। এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন মজিবর।
এখানে যদি একটা স্কুল হয় কোলের শিশুদের অন্তত অন্য এলাকায় রেখে আসতে হবে না।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা দেবাশিষ ঘোষ বলেন, চরনজিরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুবই প্রয়োজন। ওখানকার লোকেরা একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের জন্য আবেদন এবং কাগজপত্র সাবমিট করেছে। আশা করি, শিগগিরই ভালো একটা ব্যবস্থা হয়ে যাবে।