ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঐক্যকামী দল : মুফতী রেজাউল করীম

রাজনীতি

জন্ম থেকেই ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ঐক্যকামী দল। আমাদের মরহুম আমীর শায়খ সৈয়দ ফজলুল করীম রহ. ঐক্যের ব্যাপারে অধীর আগ্রহী ছিলেন। তিনি বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দের কাছে গিয়ে গিয়ে ঐক্য ও সম্প্রীতির বাণী ছড়িয়ে গেছেন আমৃত্যূ। আমরাও সেই পথ ধরে ঐক্যের বার্তা দিয়ে যাচ্ছি বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই)।

এসময় তিনি আরো বলেন, আমাদের নেতৃবৃন্দের কারো কথায় যদি কেউ কষ্ট পেয়ে থাকেন বা ঐক্যবিরোধী বার্তা পেয়ে থাকেন, আমরা তার জন্য ক্ষমাপ্রার্থী। আমরা সবাইকে নিয়ে ইসলামকে ক্ষমতায়ন করতে চাই ইনশাআল্লাহ।

আজ শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন মিলনায়তনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রতিনিধি “সম্মেলন ২০২৪”-এ ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে ও সেক্রেটারি জেনারেল মুফতী মানসুর আহমদ সাকীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ রেজাউল করীম (পীর সাহেব চরমোনাই) বলেন, স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ও তার অঙ্গসংগঠন সমূহের ভূমিকা ছিল অনন্য। এছাড়াও এই আন্দোলনে ৭৩ জন হাফেজ আলেম শহীদ হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন শতাধিক। সুতরাং আলেম ওলামার এদেশের সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সব সময় সজাগ ছিলেন।

তিনি বলেন, বিগত আওয়ামী সরকার এই দেশের নয় বরং বিদেশী দালাল সরকার হিসেবেই শিক্ষানীতিসহ বিভিন্ন সেক্টরে দেশ ও ধর্মবিরোধী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছিল। কিন্তু দুঃখজনক বাস্তবতা হল, রক্তের সাগর পেরিয়ে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়ে যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে আমরা ক্ষমতায় বসিয়েছি, তাদের মধ্যেও শিক্ষানীতিতে ইসলাম ও মুসলমানদের বিশ্বাস ও আদর্শকে অগ্রাধিকার দেয়ার ব্যাপারে আন্তরিকতার ঘাটতি আছে বলে মনে হচ্ছে।

পীর সাহেব চরমোনাই আরো বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জন্য দেশের রাজনৈতিক মাঠ এখন যথেষ্ট উর্বর। এদেশের মানুষ ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কার্যক্রমকে পর্যবেক্ষণ করে সন্তুষ্ট হয়েছে, আগামীতে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে ক্ষমতার ভার অর্পণ করতে চায়।

সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর প্রেসিডিয়াম সদস্য অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী, সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই), মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান, সহকারী মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা শেখ ফজলে বারী মাসউদ, সাংগঠনিক সম্পাদক কে এম আতিকুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক (ফরিদপুর বিভাগ) মাওলানা নূরুল ইসলাম আল আমীন, সহ-প্রশিক্ষণ সম্পাদক মাওলানা নূরুল করীম আকরাম, সহ-প্রচার ও দাওয়াহ সম্পাদক অ্যাডভোকেট বরকত উল্লাহ লতিফসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।

অধ্যক্ষ মাওলানা সৈয়দ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানী বলেন, আমরা বহু আগেই বলেছিলাম, হাসিনার সরকার টিকবে না। তার সরকার খুন, গুম, লুটপাটের মাধ্যমে দেশটাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গিয়েছিল। হাসিনার কৃতকর্মই তার পতন তরান্বিত করেছে। তবে গনভবনের পতন হলেও ফের হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠিত হতে দেয়া হবে না। স্বৈরাচারদের পতন ঘটিয়েছি কোনো দূর্নীতিবাজকে ক্ষমতায় নেয়ার জন্য নয়।

বক্তব্যে অধ্যক্ষ মাদানী স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে সেনা প্রধানের গণমুখী ভূমিকা নেয়ার জন্য ধন্যবাদ জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতী সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম (শায়খে চরমোনাই) বলেন, স্বৈরাচারী সরকার বিদায়ের পর রাজনীতির প্রতি চরিত্রবান মানুষদের আগ্রহ বেড়েছে। নোংরা রাজনীতির কারণে ভদ্র-সভ্য মানুষেরা রাজনীতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিল। কিন্তু স্বৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য ভূমিকার কারণে সর্বজনের আস্থার পাত্রে পরিণত হয়েছে। এখন পাড়া-মহল্লায় যোগ্য, চরিত্রবান লোকদেরকে খুঁজে খুঁজে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের দাওয়াত দিতে হবে। এক্ষেত্রে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশকে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে হবে।

শায়খে চরমোনাই বলেন, ইসলাম, দেশ ও মানবতার স্বার্থে ঐক্যের প্রশ্নে আমরা সবসময় আন্তরিক ছিলাম এম এখনও আছি। কিন্তু কর্মীদেরকে এসব প্রশ্ন এড়িয়ে কাজে মনোযোগী হতে আহ্বান জানান।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর মহাসচিব অধ্যক্ষ হাফেজ মাওলানা ইউনুস আহমদ বলেন, স্বৈরাচারের বিদায়ের পর বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার চলছে, কিন্তু সংস্কারের নামে কুসংস্কার চাপিয়ে দিলে পরিণতি ভাল হবে না।

এসময় তিনি শিক্ষা সংস্কার কমিটিতে কোনো বিজ্ঞ আলেম শিক্ষাবিদ না রাখায় আশঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, শিক্ষা হতে হবে দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনতার বোধ বিশ্বাস ও আদর্শের প্রতি সম্মান জানিয়ে। কিন্তু কোনো বিদেশী সভ্যতা আমদানি করার অপচেষ্টা করলে এদেশের জনগন তা মেনে নেবে না।

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বৈষম্যের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারকে বিদায় করেছি, কিন্তু স্বাধীনতার পর দীর্ঘ ৫৩বছর সবচেয়ে বেশি বৈষম্যের শিকার ছিল ইসলাম ও মুসলমানরা। ধর্মনিরপেক্ষতার হুজুগ তুলে বিগত সময়ে ইসলাম বিরোধীতার চর্চা করা হয়েছে। ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোকে বিভিন্ন ট্যাগ দিয়ে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছিল। যদিও সাধারণ জনতা ইসলামী দলগুলোকেই বেশি ভালোবাসে।

তিনি আরো বলেন ৫ আগষ্ট স্বৈরাচারের বিদায়ের মধ্যদিয়ে একটি কর্তৃত্ববাদী ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। কিন্তু কোনো পরীক্ষিত দুর্নীতিবাজকে ক্ষমতায়ন করা হবে না।

তিনি আরো বলেন, এখন সর্বত্র ইসলামের সৌন্দর্য তুলে ধরতে হবে। ইসলাম বিরোধী শক্তির সৃষ্ট ইসলাম ফোবিয়া দূর করে জনমনে ইসলামী শাসনের ভালবাসা তৈরি করতে হবে। তাহলে জনগনই ইসলামী শাসন চাইবে।

বক্তব্যে তিনি কক্সবাজারে তরুণ সেনা অফিসার খুন হওয়ার উদ্বেগ প্রকাশ করে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানিয়ে বলেন, সেনা কর্মকর্তারা যদি জীবনের যথেষ্ঠ নিরাপত্তা না পান তাহলে জনগন এই সরকারের প্রতি আস্থা হারাবে।

সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সভাপতি মাওলানা মুহাম্মাদ নেছার উদ্দিন বলেন, দেশের স্বাধীনতা সার্বভোমত্বকে ধারন করে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ এদেশের যুব সমাজের মাঝে রাজনীতি করে যাচ্ছে। আমরা এদেশে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, পেশিশক্তি ভিত্তিক রাজনীতির অবসান চাই। এবং এজন্যই স্বৈরাচার হাসিনার পতন ঘটিয়েছি। এই আন্দোলনে ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর লাখো নেতাকর্মী অংশগ্রহন করেছে, অনেক হতাহত হয়েছে। সুতরাং এই দেশে আর কাউকে সন্ত্রাস চাঁদাবাজি করতে দেয়া হবে না। পীর সাহেব চরমোনাইর নির্দেশে আমরা দেশ গড়ার যেকোনো কর্মসূচিতে সর্বাগ্রে থাকব ইনশাআল্লাহ।

এছাড়াও বক্তব্যে নেতৃবৃন্দ নির্বাচন বিষয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্যের স্বাগত জানিয়ে বলেন, আগামী ১৮মাসের মধ্যে যদি নির্বাচন করতে হয় লেভেল প্লেইং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। শুধু দৃশ্যমান কিছু সংস্কার হলেই চলবে না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যদি দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তনে কাজ না করেন হয় তাহলে জনগনের রক্তের সাথে গাদ্দারি করা হবে।

অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ-এর কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি আতিকুর রহমান মুজাহিদ, জয়েন্ট সেক্রেটারি জেনারেল ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুহাম্মাদ মারুফ, অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি জেনারেল মুফতি রহমাতুল্লাহ বিন হাবিব, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা মুহাম্মাদ ইলিয়াস হাসান, দাওয়াহ ও প্রশিক্ষণ সম্পাদক প্রিন্সিপাল আ হ ম আলাউদ্দিন, প্রচার সম্পাদক মুহাম্মাদ আবু বকর সিদ্দীক, কেন্দ্রীয় প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মাদ মাহবুব আলম, অর্থ সম্পাদক মুহাম্মাদ শফিকুল ইসলাম, সাংগঠ‌নিক সম্পাদক (চট্টগ্রাম বিভাগ) তাজুল ইসলাম শাহিন, সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) প্রভাষক আহমদ আবদুল জলিল, সাংগঠ‌নিক সম্পাদক (ব‌রিশাল বিভাগ) প্রভাষক মাওলানা মুহাঃ আল-আমিন, সাংগঠ‌নিক সম্পাদক (সি‌লেট বিভাগ) মুফতি শেখ ইহতেশাম বিল্লাহ আজিজী, সাংগঠনিক সম্পাদক (মোমেনশাহী বিভাগ) মুফতী জুবায়ের আহমদ, সাংগঠ‌নিক সম্পাদক (কুমিল্লা বিভাগ) মুফতি একেএম আবদুজ জাহের আরেফী, সাংগঠ‌নিক সম্পাদক (ফ‌রিদপুর বিভাগ) মাওলানা এস এম আজিজুল হক।

আরো উপস্থিত ছিলেন যুব উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান সম্পাদক মাওলানা ইউনুছ তালুকদার, শিক্ষা ও সংস্কৃ‌তি সম্পাদক মাওলানা মোরশেদুল আলম, ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক মুফতি শেখ মুহা. নুরুন নাবী, শিল্প ও বা‌ণিজ্য সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ এহতেশামুল হক পাঠান, আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক অ্যাডভোকেট বায়েজিদ হোসাইন, তথ্য ও গবেষনা সম্পাদক মুফতী হোসাইন মুহাম্মাদ কাওছার বাঙ্গালী, বিজ্ঞান ও প্রযু‌ক্তি সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, স্বাস্থ্য ও পরিবেশ সম্পাদক ডা. মুহাম্মাদ মিজানুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার জহিরুল ইসলাম, প্রবাসী কল্যাণ সম্পাদক মাওলানা আবুল হাসান রায়হান, সংখ্যালঘু ও নৃ-গোষ্ঠীকল্যাণ সম্পাদক মুফতি মোস্তাফিজুর রহমান, উপ-সম্পাদক কে এম শামিম আহমেদ, মাওলানা সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।